১। ছোট বেলা থেকেই আমাদের ক্রিয়েটিভিটি থেকে কপি কে বেশী মূল্যায়ন দেয়া হয়। পরীক্ষায় একটা রচনা বা ভাব-সম্প্রসারণ লিখলে যারটা বইয়ের মত হয়েছে বা বইয়ের যত কাছাকাছি গেছে তার নম্বর তত বেশী। পক্ষান্তরে, যে খুব চিন্তা করে নিজে থেকে কিছু লিখার চেষ্টা করল তারটা তো আর বইয়ের মত হবেনা। তাই সে নম্বর ও হয়ত একটু কম পাবে । তাই ভাল নম্বরের জন্য আমার কপিটাই ভাল। চিন্তাও কম নম্বরও বেশী।
২। আমারা ক্রিয়েটিভ কাজের মূল্য দেইনা। আসলে আমরা মূল্য দিতে জানিনা। ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টির যে দাম থাকতে পারে তা আমাদের কে শেখানো হয়নি। যেমন, আমরা যখন সংবাদপত্র বা একটা বই কিনি তখন আমরা শুধু চিন্তা করি, কাগজ+ছাপার খরচ = বইয়ের দাম । কিন্তু বইয়ের আসল দাম যে বইয়ের লেখার পিছনে মেধা আর শ্রম সেটা ভাবার রীতি আমাদের সমাজে নেই।
৩। আমরা সব কিছুতেই শর্টকাট খুজি । ” অল্প পুঁজি বেশী রুজি ” আমাদের মনে গেঁথে গেছে। আমরা সময় দিতে নারাজ । কষ্ট করে গবেষণা করে কোন কিছু করতে ভাল লাগে না। তাই কিছু না করার চেয়ে কপি করে যদি কিছু রুজি হয় তাহলে খারাপ কি । এই মানসিকতা থেকে কপি জিনিসটা চলে আসে।
৪। শিল্পীর শিল্পকে টাকা দিয়ে মূল্যায়ন কপির আর একটি কারন । যেমন, করিমের মিউজিক ভিডিও ১০ কোটি টাকা আয় করছে আর রহিমের টা পাঁচ হাজার টাকা আয় করছে। তাহলে নিঃসন্দেহে করিমের মিউজিক ভিডিও ভাল। এই ধরনের ভুল ধারনা আমাদের কে কপি করতে উৎসাহিত করে। কারন কপি করলেও আমার টাকা তো আসবেই।
৫। নৈতিক শিক্ষার অভাব । কপি করা যে খারাপ, কপি করলে কিভাবে ধীরে ধীরে দেশ পিছিয়ে পরে তা আমাদেরকে কেউ শিক্ষা দেয়না ।
৬। বিদেশী জিনিস পত্রের প্রতি অঘাত বিশ্বাস, আস্থা আর ভালবাসা কপির আর একটি কারন । কারন দেশী মুরগীটা ছাড়া আর সবই বিদেশীটা ভাল এটা আমাদের মনে ঢুকে গেছে । তাই আমরা নিজেরা নিজের দেশে পণ্য বানিয়ে “Made in China” লিখতে ভুল করিনা।
৭। কপি করলে কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই (কপিরাইট কঠুর ভাবে মেইন্টেইন না করা )। যারা কপি করে এরা যে ভাল লোক নহে এবং এরা যে দেশ ও সমাজের শত্ররু সেকথা কেউ বলেনা । তাই আমি নিশ্চিন্ত মনে কপির ব্যবসা চালিয়ে যাই।
বি.দ্র: এতো কিছু সত্ত্বেও কিছু মানুষ খ্যতি আর অর্থের লোভ থেকে নিজেকে বিরত রেখে নীরবে ক্রিয়েটিভ আর কপি বর্জিত কাজ করে যাচ্ছে । আমরা যদি তাদের কাজের একটু মূল্যায়ন দেই তাহলে সেই মানুষ গুলো হয়ত দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কাজ করবে । হয়ত আপনার-আমার করা একটু প্রশংসা তাদেরকে কপি থেকে বিরত থেকে কাজ করার প্রেরণা যোগায় ।